ক্লোরোfeel-এর পাতা

Sunday 22 April 2018

একটি সুইসাইড নোট : শবরী রায়

বহুদিন যাবৎ নিজের দুহাত বাঁধা অনুশীলন করছি। দু-পা বেঁধে ফেলা খুব সহজ। বাদল দর্জিকে দিয়ে বড় বড় পকেটওয়ালা এক পোশাক বানিয়েছি। পাহাড়ি নদী সমতলে নামার মুখে বিশাল এক পাথরের চাঙড়ের ওপর বসে সুইসাইড নোট লিখি। অত তাড়া নেই। ধীরেসুস্থে লিখি। ভাবি কাকে দায়ী করা যায়, কাকে কাকে দায়ী করব। ভাবতে গিয়ে হেসে ফেলি। হতভম্ব মুখগুলো স্পষ্ট দেখতে পাই। আহারে পুলিশ টুলিশ কী বাজে ব্যাপার। যে যাই করে থাক, কিছুতেই স্বীকার করবেনা। তারপর ছাড়া তো পেয়েই যাবে একদিন। তাই ক্ষমা করে দিলাম যাওয়ার আগেই। সন্ধে নামার আগে ওই পোশাক পরে, পকেট ভর্তি করি কুড়িয়ে আনা নুড়ি পাথরে, জলের শব্দ শুনতে শুনতে পা বেঁধে ফেলি, ছিঁড়ে ফেলি সুইসাইড নোট, ঘুম পাচ্ছে, কয়েকটা ঘুমের ওষুধও খেয়েছিলাম। হালকা অন্ধকারে নিজের দুহাত বেঁধে শুয়ে পড়ি জলে।

এটা আমার সুইসাইড নোট। আরও দু-একটা লিখেছিলাম। ছিঁড়ে ফেলেছি। বেশ বিপজ্জনক। কবিতা নয় কিন্তু। একসময় পার্সে রেখেছি ধারালো নতুন ব্লেড, শ্বশুর-শাশুড়ির ঘুমের ওষুধ শ-দেড়েক প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে কিনে জমানো। গলায় দড়ি? বীভৎস। ট্রেনে কাটা? ছিঃ। শুভবুদ্ধি পুরোটা কখনওই ঘুমিয়ে পড়েনি। চারপাশে মৃত্যু দেখেছি, আত্মহত্যা। যে চলে যায়, যায়। মর্গের কাটাছেঁড়ার পর ধর্মানুযায়ী। হিন্দুরা আত্মহনন করে ফেলা আত্মীয়র আত্মার শান্তি কামনায় শ্রাদ্ধ করেনা। এটাই নাকি শাস্ত্রের মত। শাস্তিই তো। যারা থাকে, যাদের রেখে চলে যায় তাদের শাস্তি। কী হিংসাপরায়ণ! নাকি তাদের ভাবনাচিন্তা তাৎক্ষণিক লোপ পায়। ড্রাগ নেওয়া মানুষ ড্রাগ ওভারডোজে মৃত, এমনও দেখেছি। এসব কোনোটাই কি ইচ্ছেমৃত্যু? আত্মহত্যা একধরনের গভীরতম অসুখ। যার লক্ষণ আছে। সাধারণ চোখে ধরা পড়ে না। হাসতে হাসতে উঠে পাশের কামরায় গিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন হতে পারে। হতে পারে তাৎক্ষণিক, হতে পারে দীর্ঘসময়ের প্রস্তুতি। যেকোনো ব্যাধির মতো এটাও একটা ব্যাধি। যার চিকিৎসা সম্ভব। আমার দিদা স্বর্ণলতার কোলের কাছে বসে গল্প শুনেছিলাম তাঁর মাসতুতো দিদির কথা। আদর্শের জন্য যাঁরা মরবেই জানতেন। দিদার চট্টগ্রামের শৈশব স্মৃতি। সবার মনে কি তত জোর হয়?

একটা চিঠি আমাকে খুব ভাবায়। অনুবাদ না করেই তুলে দিচ্ছি। এই সুইসাইড নোট আমি বহুবার পড়েছি। হয়তো আরও অনেকেই পড়েছেন। কেউ চলে যেতে চাইলে কে আর তাকে ধরে রাখে। আত্মহত্যা সবসময় কলঙ্কের স্মৃতি হয়না। ইচ্ছেমৃত্যুও বলা যায় তাকে কখনও।
          
Dearest,

I feel certain I am going mad again. I feel we can’t go through another of those terrible times. And I shan’t recover this time. I begin to hear voices, and I can’t concentrate. So I am doing what seems the best thing to do. You have given me the greatest possible happiness. You have been in every way all that anyone could be. I don’t think two people could have been happier till this terrible disease came. I can’t fight any longer. I know that I am spoiling your life, that without me you could work. And you will I know. You see I can’t even write this properly. I can’t read. What I want to say is I owe all the happiness of my life to you. You have been entirely patient with me and incredibly good. I want to say that — everybody knows it. If anybody could have saved me it would have been you. Everything has gone from me but the certainty of your goodness. I can’t go on spoiling your life any longer.

I don’t think two people could have been happier than we have been.

চিঠিটি ভার্জিনিয়া উলফের লেখা তাঁর প্রিয়তম স্বামীর উদ্দেশ্যে। শেষ চিঠি। অবশ্যই সুইসাইড নোট।

1 comment:

  1. পুরোন শহরগুলো নিজেরাই একেকটা কিউরেটর।গলিগুলো সব র‍্যাক, সেখানে আগোছালো পড়ে আছে ডাইনোসরদের অতিকায় পাঁজর। তেমন এক পাজরের মধ্যে বসে গিরিশ ঘোষ নাটকের মহলা দিত। খোলা বুক মাংসল পাছার মেয়েদের পাশ দিয়ে হেঁটেছিল ফায়ারিং স্কোয়াড থেকে মানে মানে বেঁচে যাওয়া ফিওদর। এমনি এক পাঁজরের মধ্যে বসে একান্ত এক বাড়ির তিয়াসে অজানুলম্বিত কোটের কোচরে পাথর ভরছিল স্বকীয়া আর পরোকীয়ার মাঞ্জাসুতোয় ছিন্নভিন্ন ঘুড়ি হয়ে যাওয়া উলফ ।এইসব বাড়ি ঘেরা শহরের রাজপথে,গলিতে , খোলা ম্যানহোলে কী খিড়িকির পুকুরের প্রত্যেকটি বর্ণ ভাষামালা পদপ্রবাহ জ্ঞানের প্রত্নকে বয়ে নিয়ে চলে। এই মুহুর্তের ব্যাবহৃত ভাষামালায় বর্বর অনাদিকালের প্রত্নত্বাত্তিক প্রবাহ আছে। ঠিকুচি আছে ঘটনার । সেখানে নানা ঘরে , চার দশ আটে, জেলির মত থকথকে ছায়াপথ, সরীসৃপ।যদিও কোন গল্পই শেষমেষ বাড়ি রাস্তা আর শহরের নয়, শ্লেষ্মার ঘড়ঘড় যেমন কবেকার অসাবধানে লেগে যাওয়া হাওয়া আর ধুলোর সংশ্লেষ তেমনি ।স্ব-হননের কাহিনীর বলার মধ্যে কোন গল্পের সার নেই । যা কিছু ছিল সেগুলো বলেনি কেউ, দেখেছে কেউ কেউ আর বুঝেছে একমাত্র সেই পাগল যে ধরার সুতোটা কাটবে বলে ভ্যানগগের কানের কাছে ঘুরঘুর করছিল পুরোটা শীতকাল।

    ReplyDelete