ক্লোরোfeel-এর পাতা

Sunday, 22 April 2018

মৃত্যু বনাম অধিকার : বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়

ছবি : Dr. S. Ali Wasif
তার কোনো অসুখ নেই। তার একটাই অসুখ। সে পুরুষদের আর সহ‌্য করতে পারছে না। গত ছমাস যাবৎ আরও অসহ্য লাগছে তার। সব পুরুষকে। দলমতস্থানকাল নির্বিশেষে। গত সপ্তাহের পর তা চরমে উঠেছে।

সে এক্ষুনি চলে যেতে চায়। এমন একটা উপমহাদেশে যেখানে বাতাসে বীর্যের গন্ধ নেই। যেখানে এমন পুরুষ নেই যার কার্যকর লিঙ্গ আছে। বাবা নেই, দাদা নেই, ভাই নেই, দাদু নেই, কাকু নেই, মামু নেই, মামাশ্বশুর নেই। প্রেমিক নেই। বর নেই। প্রিয়বন্ধু নেই। কিন্তু সেই ভালো জায়গাটা কোথায়? সুবোধ সরকার বলতে পারেননি। বললেন, বইয়ে আছে দেখে নিও। জয় গোস্বামী বললেন, জানি আমার কাছে দস্যুতাই প্রত্যাশা করেছ। কবিরা এত মিথ্যুক হয়? ছিঃ ছিঃ। নির্বাণ বলেছিল, তুই তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখা। এটা তোর মনের অসুখ। গত তিনদিনে সে ডিপি কালো করে নির্বাণকে ব্লক করে দিয়েছে। নির্বাণ ওর হাত ধরেছে। মানে, ধরেছিল। গুড টাচ। কাঁধে হাত রেখেছিল। হাত কাঁধ থেকে নীচে নামেনি। ঘটনা হল নির্বাণও পুরুষ। একটা নির্জন দ্বীপে নির্বাণের গোপন অঙ্গটিকে ও আর বিশ্বাস করে না। এখন। কারণ এখন ও অ্যালাউ করতে পারে শুধু লিঙ্গহীন, অণ্ডহীন, লিউপ্রাইড দিয়ে খোজানো মানুষকে। নপুংসক, উত্থানরহিত, অপারগ না-পুরুষকে। শিশুপুরুষ ও ধ্বজাহীন বৃদ্ধকে। ব্যাস। কমা আর ফুলস্টপ।

বেণুমাসির বয়েস সিক্সটি প্লাস। তাকে একলা পেয়ে বলপ্রয়োগ করল তারই চেনা ইলেকট্রিশিয়ান। কালো, পাঁচ ফুট আট, বয়েস আঠাশ। আরতির নাতনির বয়েস সাত বছর। তাকে বিলা করল তার ফোকলা মেসোদাদু। বয়েস আটষট্টি। পকসো-র নকশা দিয়ে কিছু হবে না। আইন আদালত উকিল দিয়ে হবে না। চাই গ্যাসপুতুল। পুতুলের গোপন অঙ্গে মৃত্যুগ্যাস ভরা আছে। পুতুলকে যা করার কর, তারপর ফোট। গ্যাসপুতুলের দাম আছে। তবে রাষ্ট্র ভেবে দেখতে পারে। ধর্ষণ করলেই গ্যাসপুতুলের সঙ্গে এক রাত। লাইভ দেখাবে। মহাউত্থানের পর মহাপ্রস্থান পর্ব। যেমন পাণ্ডুর হয়েছিল মাদ্রীর সঙ্গে। কিন্তু পাণ্ডুর হার্টে ফুটো ছিল আর বারণও ছিল। সেই মুহূর্তে মাদ্রী শোনেনি সেই বারণ। ফলে যা হবার তাই হল। যাই হোক, এটাই শাস্তি হোক এখন। খরচাপাতি দেবে ভোটে জেতার সরকার।

ব্যাপারটার বিহিত করতে না পারলে মেয়ে হিসেবে সে আর বাঁচবে না। কারণ সে আর বাঁচতে চায় না। আত্মহত্যা নয়। নিষ্কৃতিমৃত্যু নয়। ইচ্ছামৃত্যু। প্রতিবাদমৃত্যু। সে মরলে তার চোখদুটো পাবে(না কোনো জন্মান্ধ মেয়ে নয়), যার চোখ উপড়ে ফেলেছে কোনো পুরুষের নগ্ন নৃশংস হাত। তার লিভার, কিডনি, হার্ট, ত্বক, সব সে দান করে যাবে আহত অবসৃত আক্রান্ত মেয়েদের। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এমন একজন পুরুষ যে কবিতা লেখে। তার কাছ থেকেও চিরবিদায়। সে-ই তাকে আইডিয়াটা দিয়েছে। কিন্তু ওই যে, পুরুষ তো। তাই সরি, এবং গুডবাই।

শুনলাম, ঝাঁকে ঝাঁকে শ্রমিক লাল পিঁপড়েরা শরীর ফুলিয়ে পেটে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বের করতে পারে গন্ধবিষ। আক্রমণ এলে। এইভাবে তারা রানি পিঁপড়েকে বাঁচায় আক্রমণকারীর হাত থেকে। অর্থাৎ অ্যাক্টিভ মাস সুইসাইড। কাগজে ফলাও করে বেরিয়েছে। সে নিজেকে শ্রমিক পিঁপড়ে ভাবে। তার আত্মবলিদানে যদি টনক নড়ে কারও। তারপর দলে দলে গণবিস্ফোরণ ঘটিয়ে যদি নিরস্ত করা যায় শত্রুদের। যদি শিশু ও বৃদ্ধাদের দেওয়া যায় ধর্ষণহীন সমাজ। যদি কিশোরী, তরুণী, যুবতীরা বেছে নিতে পারে আত্মরক্ষার অধিকার। ভাবার সঙ্গে সঙ্গে তার মাথায় জেগে ওঠে টারবাইন। পেটে গ্যাসবেলুন। সে ভাবে, যদি ফের আকাশে ওড়ে কাগজের লালনীল ঘুড়ি। যদি হাঁটু মুড়ে মেয়েদের কাছে ক্ষমা চান রাষ্ট্রনায়ক, কবি, অভিনেতা, সফল ও ব্যর্থ পুরুষেরা। যদিও ইউটোপিয়া, যদি এমন দিন আসে, মেয়েরা বেছে নিতে পারে উত্তরাধিকারের সাম্য অধিকার? 

No comments:

Post a Comment