ক্লোরোfeel-এর পাতা

Sunday, 22 April 2018

মৃত্যু বিষয়ক : সায়ন্ন্যা দাশদত্ত

আর পাঁচটি সংসারের মতোই যমের একটা আবছায়া আভাস আমাদের চালেডালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। আগেও ছিল চিরকাল। গ্রীষ্মরোদে বাসা করেছে চড়াই। স্বামী স্ত্রীর ঘর। একজোড়া ছানা হয়েছে ডিম ফুটে। মিহি মিহি চিঁ পিঁ শুনতে পাচ্ছি মাঝেমাঝেই। তারপর বিকেলে ঝড়। বিস্কুট হাতে মগ্ন হয়ে দেখছি দখিনের নারকোল গাছ মাথা নাড়ছে পাগলের মতো। একটা আকস্মিক আলো। কড়কড় শব্দে মাথা ভেঙে যায় কারুর? মৃত্যু তবে নীরবও নয়?
          
যমের গল্পটা এভাবে ফুরিয়ে যায়না। সে চড়াই-এর জোড়া বাচ্চা হাওয়ায় উড়ে পড়ল। লাল সিমেন্টে কালো বর্ডার টানা। একটা হিমশীতল মেঝের ওপর কীভাবে ওরকম নিস্পন্দ পড়ে থাকা যায়, যমের গল্প না শিখলে জানতে পারেনা কেউই !
          
শিখলাম যম আছে। সারাজীবনই যম কাছেপিঠেই একটা অন্যমুখে হেঁটেচলে বেড়ায়। শুধু তেলাপোকার মতো অদ্ভুত একটা তেলচিটে গন্ধ থাকে তার। কেউকেউ টের পায় সময় হলে আর অনেকে রাতারাতি ভ্যানিশ হয়েও যায়।
            
কথায় কথায় জানতে পারলাম ইচ্ছেতেই চলে যাওয়া সহজ। দু তিনটে নল অথবা এক আধটা কাচের মতো স্বচ্ছ সিরিঞ্জ এবং বোতল আঙ্গুল থামিয়ে চুপ করতে বলে। যেখানে কোন সুইচরুম নেই। কেবল কতগুলো অচেনা অজানা তার তাদের নির্দিষ্ট অঙ্গের পাশে একপশলা বিদ্যুৎ রেখে গেছে। মৃত্যু নিয়ে এত কথা হয়নি তো আগে! তবে এখন? এখন?
             
নিরোধ অসহায় ছাতার নীচে হাঁটছে। লুকিয়ে থাকাই ভালো। এই বিপুল মানুষের ভেতর বাঁধন কেমন হয়? জনসংখ্যার প্রাবল্য, তবে কি একদিন জায়গা হবেনা আর? তবে বরং ছাঁটাই শুরু হোক। আহা!ও তো উইলিং নয়, তবে কেন আয়ুর ভেতর হাঁটা। মৃত্যু চাও? বেশ, রাজি। তবে সে যদিও তোমার। যে ট্রামের সাথে জীবনানন্দ কুয়াশার মতো মৃত্যু হয়ে যাচ্ছিলেন তার ক্রমিক নম্বর দেবে? জাস্ট ডায়ালে আ্যড করতে হবে? জীবনানন্দ আপিল করেননি! অন্যায়! তবে আর সমাজ রইল কোথায়? সিদ্ধান্ত যা নেওয়ার তার একটা লিপিবদ্ধ সতর্কীকরণ থাকে, কবি বলেই অগ্রাহ্য হবে সেসব?
               
বিনয় যখন পাগল হয়ে যাচ্ছিলেন...নোংরা নখ, ঘরভর্তি মলমূত্র, কফ। একবেলা খাইয়ে দেওয়ার কেউ নেই। কেউ নেই একটি গল্প বলার। সেই মুহূর্তে পাগল হচ্ছেন বিনয়...অনুগামীরা কেন একটি ইউথেনশিয়ার আয়োজন শুরু করেনি? তবে কি আগামী বছর বিনয় সংখ্যার বদলে দিকভ্রান্ত ক্লান্ত লেখকের সেলফ কিলিং ডিনার সাজাবে ভাবছ?
               
যম যেভাবে দাঁড়ায়, তার পায়ের ফাঁকে একবিন্দু আলো বাতাস নেই। যার মৃত্যু, যার জীবন্মৃত চিবুক একটি ফোঁটাও ফলের রস নেবেনা তার জন্যে মনোনয়ন নেবে? জরুরি ওটা? দিকেদিকে এই অজস্র প্রচার...প্রতিটি অক্ষম প্রাণ মৃত্যু বেছে নিক, এই মিছিলের দৃশ্যদূষণ অধিক। তবে কি কমিয়ে ফেলাই মুখ্য? একটি যৌক্তিক মুখোশ এবং আইন আঙুল দেখিয়ে বলছে জড়িয়ে থাকা সমস্ত হাত মিথ্যে। সমস্ত আয়ু, বিকল্প সুখের ভাবনা সবই কেমন ধোঁয়ার মতো অলীক হয়ে যাচ্ছে। এতদিনের বাঁচতে চাওয়া একলা...আপাতত ঘুমিয়ে পড়ার আয়োজন তবে মুখাপেক্ষী কেন? দ্বিচারিতা যমের পছন্দ নয়। মিহিন বাদশাভোগ চালের পায়েস চাপল কোথাও...খাওয়া হবেনা জেনেও শ্বাস টানলেন বয়স, তিনবারের স্ট্রোক, সব সবটা বুঝতে পারেননা ভালো! মর্জি মতন গন্ধ বুঝতে চান...বুঝতেও পারেন, যেমন আজ...এখন...এই! যম গোপনে সিঁড়ির কাছে এল। সিঁড়িঘরে আলো জ্বালেনি কেউ!

2 comments:

  1. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  2. যম প্রথম মানব যিনি 'মরিয়া প্রমান করিলেন' মানুষ মরনশীল। কিন্তু যমের মৃত্যুও তো ইচ্ছা মৃত্যু। যজ্ঞে আহুতি দিয়ে মৃত্যু পরবর্তী ঈশ্বরত্ব প্রাপ্তি ঘটে যমের। ঋগবেদের(১০/১০) শুক্তে পাওয়া যাচ্ছে সগোত্রে বিবাহ(যৌন সম্পর্কিত!) ও রাত্রির সৃষ্টির তত্ব আর এখানেই এদেশের প্রাচীন সমাজের যৌনক্রিয়া সম্পর্কিত নৈতিকতার কয়েনগুলো তৈরী হচ্ছিল। যমের একটি অর্থ যমজ। সূর্য ও সঞ্জার যমজ পুত্র ও কণ্যা যম ও যমী যৌবনে পা দিলে, পারিবারিক-সম্পর্ক ও বিবাহ সমন্ধীয় ধারনাগুলো পরিপুষ্ট না হওয়া প্রাচীন সমাজের প্রথম নারী যমী তার স্বাভাবিক যৌন আকাণ্খায় ও সন্তান কামনায় যাকে পেতে চায় সে তার যমজ ভাই যম।এখানে বলার ওদের আরো দুটি ভাই এর একজন শনি ও অপরজন,ওদের সতভাই মনু। অর্থাৎ মনুবাদী ব্রাহ্মণ্য নৈতিকতার আঁতুরঘরটি বোধহয় গড়ে উঠছিল পুরাণোকল্পের তলে তলে।যম যমীকে পত্নি হিসেবে মানতে চায় না ও ঈশ্বর সব দেখছেন এবং বোনের সঙ্গে এই পাপ করা অসম্ভব বলে জানায়। যা যমীর কাছে দূর্বলতার কারন বলে ঠেকে। এখানে বিবাহ শব্দটি ব্যাবহার হয়নি। হয়েছে পত্নি। যেখানে পত মানে শোয়া আর নি অর্থে আলিঙ্গন। সোজা কথায় যম বলে আমি তোর ভাই তাই তোর সঙ্গে শুলে পাপ হবে। তুই অন্য পুরুষ খুঁজে নে। অত:পর যমের ইচ্ছামৃত্যুকে দেবতারা যৌন কামনার দমনের উদাহরণ হিসেবে উচ্চাসনে বসিয়ে মৃত্যুর পরে তাকে দেবত্ব আরোপ করল। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রথম মৃত্যুটি ও স্বাভাবিক ভাবে ঘটলো না। সুইসাইডটার সঙ্গে যমীর পাপ ও নারীর যৌন সুখ পাওয়ার ব্যাপারে জেনেসিসের কায়দায় পাপকে যুঁতে দেওয়া হল। এদিকে যমীর প্রশ্ন ছিল এর আগে দেবতারাও কি এমন "ব্যাভিচারে" লিপ্ত হয়নি? ঋগবেদে (১০/১২/৬) তে তো পাওয়া যাচ্ছে যম তার মায়ের সঙ্গে যৌণক্রিয়ার লিপ্ত হয় এবং গুজব হল যমীর মা,মেয়ের পাপের ইন্ধনদাত্রী! যাই হোক যমের মৃত্যুর শোক যমী ভুলতে পারছিল না। এটা সেই কাল যখন সময় ও রাত্রির সৃষ্টি হয়নি। শোকাকুলা যমীকে শান্ত করতে ও তার মনকে বিভ্রান্ত করার উপায় হিসেবে চীর আলোর দিনে সৃষ্টি হল সময় ও রাত্রি। রাত্রি যা দিনের পিছে পিছে যাবে। যমীকে তো কালোই ধরা হল যমুনার কালো জলের উপমায় অথবা অন্য কথকথায়।কোথাও যমীর নাম হল কালিন্দী। আর যম, সে তো ধর্মরাজ।বৌদ্ধধর্মে যম কেবল মৃত্যুর বা নরকের অধীশ্বর নয় যম যুক্ত হল পুনর্জন্মের কারন হিসেবে। মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের অনেক প্রাচীন কাহিনীতেও কিছুটা ভিন্ন নামে যমকে পাওয়া যায়।সে আলোচনা এখন থাক।


    ReplyDelete