ক্লোরোfeel-এর পাতা

Wednesday 1 March 2017

শিল্পসম্মত বাস্তব : যশোধরা রায়চৌধুরী



কানের মধ্যে ঝাঁঝালো শব্দ ঢুকছে...শুতে যাবার আগে...ঘুম উড়ে যাচ্ছে...বড় বড় চপারে চাপাতিতে কাটা হচ্ছে মানুষের মাথা...ঘুঁষিতে থুবড়ে পড়ল দেব, দেবের মাস্কুলার দেহ, গেঞ্জি গায়ের সঙ্গে আটকে গেছে...চটচটে সব ব্যাপার...ঘাম ছিটকোচ্ছে, ধুলো উড়ছে, রক্ত ফিনকি দিচ্ছে, স্লো মোশন দুর্দান্ত সিনেমাটোগ্রাফির গুণে, বড় স্ক্রিনে সব কিছু একদম সামনে ঘটছে দেখতে পাচ্ছি...আর, ঘুমের মধ্যেও, যে জন্য, মাঝে মাঝে তুমুল গালাগালি উগরে দিচ্ছি, স্বপ্নে দেখছি, না স্বপ্ন কেন দেখব, কোন বদ ইচ্ছেই তো আর অবদমিত হয়ে স্বপ্নে যাচ্ছে না, সব সঙ্গে সঙ্গে নিষ্কৃতি পাচ্ছে, নিকলে নিচ্ছি হিংসাকে, ঘুমের আগেই, সেই বেডরুমের টিভির স্ক্রিনেই... এই উগরে দেওয়া...হ্যাঁ  সেটাই তো, শিল্প
এই যে ক্লোরোফিলে ফিলিং টিলিং লিখছেন ভদ্রমহোদয়গণ, কত ভালো সেসব, কতই না ডেটলে ধোয়া আর ফিনাইলে চোবানো, কতই না শিল্পসম্মত। তাই না? এই যে, আমরা ফেসবুকিয়ান মহান সংস্কৃতি সম্পন্নগণ, আমাদের এই সঙোস্কিতি চর্চা, কতই না বাস্তব, মাঝে মাঝে ভেবে চমকে উঠি...শিউরে উঠি। বাস্তব, বাস্তবের মতো নালা নর্দমায় বয়ে যাচ্ছে বলে, শিল্প, শিল্পের মতো আকাশগঙ্গা হয়ে যাবে। এটাই কি তবে সবচেয়ে রাজনৈতিকভাবে সঠিক ঘটনা, এই সময়ের, আমাদের প্রজন্মের, আমাদের বঙ্গোসঙোস্কিতির
রাত্তিরে আমাদের বেডরুমের টিভিটা খোলা থাকে, বসবার ঘরের টিভিটা বন্ধ হয়। বেডরুমের টিভিতে, রোজ শুতে যাবার আগে, আমরা দেখি। সঙোস্কিতিসম্পন্ন আমি আর আমার সঙোস্কিতিসম্পন্ন বর...আমরা দুজনেই। নিজ নিজ স্মার্টফোনে ওয়াই ফাই খুলেছি, ইউটিউবে তখন হয়তো চলছে ফরাসি রেডিও, বা জাপানি মার্শাল আর্ট, হয়তো চলছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত অথবা হিন্দি শর্ট এক্সপেরিমেন্টাল ফিল্ম। সব মিলিয়ে একঝাঁক সঙোস্কিতি করতে করতেই কিন্তু আমাদের চাই, চাই, চাই ঘরের টিভিটিতে কিছু একটা।
কী সেই কিছু একটা? সেটা, এঁজ্ঞে, উচ্চস্তরের জিনিশ। সেটা, বাংলা সিনেমা।
 
দুরকমের বাংলা সিনেমা দেখি আমরা। একরকম, অ্যানালগ জমানার। সে সিনেমার নাম সচরাচর, বড়বৌ মেজবৌ সেজবৌ ছোটবৌ বাবা কেন চাকর মায়ের সিঁদুর কেন লাল...ধরনের। সে সিনেমার নায়ক পোসেনজিত, নায়িকা রিতুপন্না। সে সিনেমার নায়ক তাপোস্পাল, নায়িকা শতাব্দিরায়। নায়ক নায়িকারা ব্যাগি প্যান্ট পরে, মাঝে মাঝে নলবনের মাঠে এয়ারোবিক ডান্স করবে। বাকি সময়, বাড়ির খাবার ঘরে লাইন দিয়ে খেতে বসে, কার পাতে কত বড় মাছের টুকরো পড়ল তা নিয়ে ঝগড়া করবে। আর বাকি সময়, বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা মা বা বাবা বা বৌদি বা দাদাকে বাড়ি থেকে চোর অপবাদে বার করে দেওয়া হবে, ঠেলে ফেলে দেওয়া হবে, তাদের মাথা সিঁড়ির কোনায় লেগে ঠুকে গেলেই গলগল লাল রক্ত। রক্তের রংটা একদম বাস্তবসম্মত না, কেননা রং আমি চিনি। স্কুলজীবনে, কলেজজীবনে অনেক পোস্টার এঁকেছি ওই রং দিয়ে। ক্রিমসন রেডের ওই শেড দিয়ে লাল সূর্য, গণতান্ত্রিক বিপ্লব, অতিকায় সুদিনের আগমনের কথা লেখা হত একদা। এই একই পেটি থেকে কিছুটা পোস্টার কালার লাগত এই সব অ্যানালগ সিনেমার 'অবাস্তব' রক্তাক্ত দৃশ্যে। এইসব অ্যানালগ ছবি আমাদের নস্টালজিক করে, আমাদের মনে পড়ে বাড়ির পাশের বিজলি সিনেমা(মিনার-বিজলি-ছবিঘরের চেনটা মনে পড়ে যায়), এইসব অ্যানালগ ছবি আমাদের মনে আনে একরকমের পারিবারিক, ডালভাত ডালভাত, মিনমিনে ধরনের শান্তি মনখা রাপ। বাঙালি বাঙালি, হেরো হেরো মন কেমনও। আহা, উহু, কত অবাস্তব ছিল তখন সিনেমা। আর কতই না কমফর্টিং। তাছাড়া পলিটিকালি ইনকারেক্টও! কী যে শান্তি সেই ইনকারেক্টে, যখন রচনার কপালে দগদগে সিঁদুর লেপে জিনসের ডাংগারি-পরা(মানে শ্রমিকের পোশাক) পোসেনজিত বলত, এবার থেকে তোমাকে আমার বাড়ির মেঝেতেই শুতে হবে, আমাদের মোটা চালের ভাতই খেতে হবে...কেননা এখন থেকে তুমি আর বড়লোকের মেয়ে নও, তুমি আমার মতো একটা গরিব শ্রমজীবী মানুষের বিয়ে করা ইস্তিরি।

সেই সিঁদুরের রংটাও ক্রিমসন, সেই অবাস্তবতায় চোবানো।
 
তারপর হঠাৎ সব, কেমন যেন, খুব, বাস্তবসম্মত...ইয়ে, মানে, খুব ডিজিটাল হয়ে গেল।

ডিজিটাল জমানার সিনেমা দেখায় যখন, তখন আমরা তাই আরও বেশি নড়েচড়ে বসি। কারণ এই অবস্থাটার সঙ্গে আমাদের কোনও স্মৃতি জড়িয়ে নই। এটা নতুন, টাটকা বীভৎস। আমরা শিক্ষিত হই, আমরা আক্রান্ত হই, আমরা বেড়ে উঠি এইসব ছবি দেখে।
দ্যাখো আমি বাড়ছি মাম্মি
সবকিছুর মতো ডিজিটাল জমানার নামকরণগুলোও আলাদা। এখন নাম ইংরেজি-হিন্দি শব্দে অধ্যুষিত...ঠিক তো, এটাই তো হবার কথা ছিল! নব্বই দশকের পর থেকে দু হাজার অব্দি অপেক্ষা করতে হল যদিও, আমাদের নব্বই দশকের বাংলা কবিতার যা যা বৈশিষ্ট্য দেখা গেছিল সেই সব বৈশিষ্ট্য আছে এদের মধ্যেও...তাকে দোষ বলো তো দোষ, গুণ বলো তো গুণ! আসলে যাকিছু দোষ তাই যে গুণ এটাও তো আমরা ডিজিটাল জমানার পরেই জানতে পেরেছি...এই যেমন ইংরেজিতে হানড্রেড পার্সেন্ট লাভ, অথবা পাওয়ার, অথবা টাইগার, চ্যালেঞ্জ, হিরো, লাভ এক্সপ্রেস...অথবা হিন্দিতে জোশ, দিওয়ানা, আওয়ারা, রংবাজ, বিন্দাস...অথবা দুইয়ের মিশ্রণ, যথা, 'বাদশা দ্য ডন' অথবা অ্যানালগ জমানার প্রতিকার প্রতিশোধ প্রতিহিংসা থেকে উত্তরণ হয় ক্যাজুয়াল বাংলা পাগলু ওয়ান, পাগলু টুতে।

এইসমস্তর পরে আসে বিখ্যাত ওপেনিং সিন। হঠাৎ, এই ছবিগুলির ক্যামেরা এক অন্য উচ্চতা পেয়েছে লক্ষ করি। উঁচু উঁচু ক্রেনে চেপে উচ্চস্তরের ক্যামেরারা মাঠ ঘাট ছেনে নেয়। রংগুলো চোখের উপর হামলে পড়ে। সেটগুলো...হেঁ হেঁ, সেটগুলো সব আশ্চর্যভাবে তেলেগু ছবির সেট হয়ে যায়। সেইসব সাদাহলুদ বাড়ি, সবুজ লন, সেইসব অত্যাশ্চর্য পরিমার্জিত ইনটিরিয়র। যা যেকোনও দক্ষিণী ছবির সম্পদ

আর নায়ক নায়িকা, মানে ওই জিত দেব শুভশ্রী শ্রাবন্তী কোয়েল(অসামান্য পারমুটেশন কম্বিনেশন ক্ষমতা থাকলে এর পর সব ছবির মূল কাস্ট আপনি বানিয়ে নিতে পারবেন...জিতশুভশ্রী বা দেবকোয়েল, দেবশুভশ্রী বা জিতশ্রাবন্তী...ইত্যাদি ক্রমে) বাদে সব ভিড়ভাট্টা, পাবলিক, আমজনতা, যাই বলুন, সব্বাই কেমন হুবহু দক্ষিণী ছবির হয়ে যায়। লুঙ্গি ভাঁজ করে পরা গণতন্ত্রের লোকের বড় বড় কাটারি আর কাস্তে, তরোয়াল আর ভোজালি হাতে রে রে করে তেড়ে আসার দৃশ্যে অধিকাংশ ছবি শুরু হয় যখন, তখনই, হ্যাঁ তখনই বোঝা যায় আমরা এসে গেছি বাংলা ছায়াছবির ডিজিট্যাল জমানায়। অর্থাৎ বাস্তবসম্মত জমানায়।

অথবা যখন বাংলা কীর্তন গাওয়া হয় গাঁদা ফুলের মালায় সজ্জিত দক্ষিণী মন্দির চত্বরে। ফল একই।

কী সেই বাস্তব? সেই বাস্তব রামোজি ফিল্ম সিটির বাস্তব। সেই বাস্তব সিঙ্গাপুর বা ব্যাঙ্ককের সোনালি তটদেশে নৃত্যগীতের বাস্তব, ফাইট সিনে গুঁড়ো গুঁড়ো ঘাম ঝরার স্লোমোশনের অতিনাটকের বাস্তব। সেই বাস্তব প্রেমের গানে নলবন থেকে শোঁওওও করে গিয়ে সুইজারল্যান্ড বা গ্রিসে গিয়ে পড়ার বাস্তব। 

ডিজি-জমানায় গান মানে টুকরো টুকরো শব্দের কোলাজ, শব্দগুলো তুখোড় স্মার্ট। কিছুটা কবিতা, কিছুটা ছড়া। কিছুটা পোস্টার, কিছুটা স্লোগান। আমাদের নব্বই কবিতার সেই প্রেমের কবিতায় 'তুই' 'তুই' শুরুর পর ঠিক কুড়ি বছর পরে, কিমাশ্চর্যম! বাংলা ছবির গানে শুধুতুই আমায়, আমি তোকেলিরিক...আর, সুরগুলো ভেঙে ভেঙে জুড়ে দেবার খেলা, বাজনাগুলো আলাদা আলাদা সব স্মার্ট বাজনা...আলাদা করে তুলে পরে সিন্থেসাইজ করে দেবার মজা। এইসব মিলেমিশেই একটা অদ্ভুত মুম্বইসংশ্লেষ। যেটা দেখানো হবে দক্ষিণী মারপিট এবং দক্ষিণী ক্যামেরা মুভমেন্টের সঙ্গে। 

এই গোটা ব্যাপারটাই আমরা হাঁ করে দেখি। আমি আর আমার বর। দুই সঙোস্কিতিসম্পন্ন। আমরা শিখি দেবের মাসল, জিতের কন্ঠস্বর। দেখি অঙ্কুশের দৌড়নোর ভঙ্গি, সোহমের কমেডি, আবিরের ফাইট সিন। আমরা জানি, শ্রাবন্তী কাঁদে শুভশ্রী নাচে...আর কোয়েল রেগে গেলে বলে, হ্যালো হ্যালো

তবে মেয়েদের খুব একটা কাজ নেই, পুরুষেরা সবকিছু করে আর মেয়েরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। এটা খুব নস্টালজিক। অ্যানালগের যুগেও এমনই ছিল। কিন্তু এই নারীরা অনেক ভাল মেক আপ করে, অনেক বেশি পাতলা কোমরের এবং এদের পোশাক একেবারেই ক্লাস ডিফারেন্স সূচিত করে না। অ্যানালগ যুগের হিন্দি ছবির সঙ্গে বাংলা ছবির যে একটা বিশাল শ্রেণিদূরত্ব ছিল সে দূরত্ব এখন আর নেই। এই পোশাক হলিটুড বলিকুডের মত। স্মার্ট। যেমন মেকিং, তেমন পোশাক। শীতল আল্পসের কোলে স্বল্পবাসা কোয়েলের এয়ারোবিক এক্সারসাইজ তথা নাচ তাই আরও বেশি সুদৃশ্য। তার মানেই বাস্তবোচিত। 

আরে, কে বলেছে মশাই, যে শিল্পকে বাস্তবোচিত হতে হবে? শিল্প কখনও বাস্তবোচিত হয় না, হয় না, হয় না! তো সেদিনের শিশুটাও জানে। ঠাকুমার ঝুলি থেকে হ্যারি পটার, কেউ কখনও অবাস্তবতার দোষে এসবকে দুষেছে নাকি? মানুষ ছবি দেখতে যায় গল্প দেখতে। আর গল্প যত ভালো ভাবে বলা যাবে, যত ভালো রং ঢং, যত ভালো ক্যামেরার কাজ, যত ভালো স্ক্রিপ্ট, ততই সেই ছবি ভালো। বাংলা ছবি নব্বই দশকে ধুঁকছিল, ব্যবসা ছিল না। এখন ব্যবসা করছে। দেব জিতের হাত ধরে আবার হলে গিয়ে গ্রামবাংলা, মফস্বলবাংলা সিনেমা দেখছে। ফেরত যাচ্ছে ভিডিও পার্লারে। ব্যবসা দিচ্ছে গণমাধ্যম, ব্যবসা দিচ্ছে অ্যাকশন মুভি। হোক না তেলেগুর রিমেক হিন্দির রিমেক...তবু, স্ক্রিপ্ট দেখেছেন? টানটান একদম। মুচমুচে, খাস্তা। হিউমারে ঠাশা। ভিলেন বা কমেডিয়ান হিসেবে রজতাভ-আশিস বিদ্যার্থী-খরাজ-শুভাশিসদের বাজারও যে এতে ভাল হচ্ছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ আছে নাকি।

না, নেই তো। সেকারণেই তো রোজ বেডরুমের টিভিটা আমরা খুলে রাখি। চোখের কানের মাথার ওপর দিয়ে গড়িয়ে যায় গঙ্গাজলের মতো বাংলা সিনেমার জল...কে না জানে মাতা গঙ্গে- মতোই সর্বংসহা, সর্বগ্রহীত্রী এই মাধ্যম।
এই জল, নর্দমার জলের মতোই পবিত্র। এই জলে ছেঁড়া প্লাস্টিক, ন্যাকড়া...পুরনো উপকরণ, নতুন ভাষা..., গালাগালি, এইইইইই বলে হুমকি, আর বড় বড় কাটারি-চপারের কেরামতি...হিংসা-খুন-রক্তের ঢলাঢলি। 

হ্যাঁ, এই রক্তের রং বেশ বাস্তবোচিত কিন্তু। বলতেই হবে। 

বাংলা ছবির দক্ষিণীকরণের সঙ্গে সঙ্গে ঠিক যেমন আমাদের রাজনীতিও দক্ষিণীকরণ হয়েছে। ক্রমশ ভোজালির সাইজ বাড়ছে আর রক্তের রং গাঢ়তর লাল হচ্ছে। বাংলা রাজনীতিতেও দেব আছে তাপোস্পাল আছে আছে গলায় উত্তরীয় ঝোলানো পলিটিশিয়ান, আছে চড়াম চড়াম কাড়ানাকাড়া...ঠিক তেলেগু তামিল সিনেমার মতো। 

আর আমরা, নিজ নিজ ট্যাব কম্পুটারে, পড়ছি মার্কিন সাই ফাই, দেখছি জাপানি কার্টুন, ভাবছি  মিশ্র খাম্বাজ...শুচ্ছি গোদার-পোলানস্কি-আব্বাস কিয়ারোস্তামি। 

কারণ আমরা সঙোস্কিতি সম্পন্ন


কার্টুন : শুভেন্দু সরকার 

7 comments:

  1. যা বলেছো! একদম সত্যি।

    ReplyDelete
  2. যা বলেছো! একদম সত্যি।

    ReplyDelete
  3. চাবুকের মত লেখা

    ReplyDelete
  4. দুর্দান্ত শান... কিন্তু সমাধান কি?

    ReplyDelete
  5. জয়া, সমাধান কি থাকে কিছুরই? আমরা গা ভাসিয়ে আছি... যতক্ষণ শ্বাস , ততক্ষণ আশ।

    পাবলিক যা খাচ্ছে তাই ত বানানো হচ্ছে। অন্তত সেটাই ত দাবি নির্মাতাদের। এসব না করলে পাবলিক খায় না।

    থাঙ্কু ঈশিতাদি, থাঙ্কু সই সঙ্গীতা!

    ReplyDelete
  6. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  7. আমাদের বাপ ঠাকুর্দারা স্বাধীনতার পরপর দু:খ করতেন কেন যে ঊষর পুরুলিয়া, বিহারে না গিয়ে খনিজে সমৃদ্ধ ধানবাদ গেল। আমারও দু:খ হয় কেন যে ভিশাল ভরদ্বাজ না হয়ে কপালে ঋতুপর্ন জুটেছিল।ফলশ্রুতি, বর্বর কোলাহলের জন্য সৃজিত আছে, তুলো ফাটা পাশ বালিশের মত 'খারাপ তপন সিংহ" কৌশিক, এরকম আরো অনেক।মেইনস্ট্রিম শরীরটা তো রাখতে হবে, অগত্যা দেবদ্বিজে ভক্তি।সাউথ সিটির ফ্ল্যাটের মালকিনের মৈনাক আর মালকিনের ঠিকে ঝির হরনাথের এলেম ও মনস্ত্বাত্তিক দূরত্ব খুব বেশি নয়।মালকিন ও দাদা আইফোনে যা যা করে সস্তার চাইনিজেও সেই সেই হয়।বাকিটা ব্যক্তিগত।তেলেগু তামিল ছবির মূলসুর এন্টারটেইনমেন্ট এন্টারটেইনমেন্ট এবং এন্টারটেইনমেন্ট।তবু ওদের ছবির সঙ্গীত যথেষ্ট ভাল।পশ্চিমকে নকল করেও নিজ্বসতা বিসর্জন দেয়নি পুরোটা।রহমান বা ইলিয়ারাজা ছাড়াও নতুন প্রজন্মের অনেকেই বাহুবলি।আর এখনো বঙ্গদেশের গ্রাম মফস্বলে বিয়ে পৈতে অন্নপ্রাশনে বাজে "আমে দুধে মিশে গেল পক পক পক " বড়জোর কিশোরকুমারের গাঁক গাঁক করে গাওয়া " নাই নাই এ আধাঁর থেকে..." অধুনা যুক্ত হয়েছে জিতের গান। তবু আশির দশকের মিঠুন বাপ্পির আজো অনেক কদর। যেদিন থেকে সব ধরনের লোকায়ত ব্যাপার মানে যাত্রা,কীর্তন কী টুসু ভাদু নষ্ট হল।গ্রামের মেলায় ভিডিও পার্লার হামলে পড়ল, সেই ছিদ্রপথে সুখেন দাস, অঞ্জন দত্তরা ঢুকে পড়ল শহরে তৈরী পুরোদস্তুর গেঁওমি নিয়ে। প্রত্যন্ত গ্রামের লোকেরা টাউনে বা সদরে না আসা ইস্তক সিনেমার সঙ্গে যুক্ত খুবই কম ছিল বরাবর।দরকারও পড়ত না। একদা গ্রামে গ্রামে বার্তা রটিল শত্রু আর বেদের মেয়ে জ্যোতস্না কলকাত্তাইয়া কালচারাল হেজিমনির সাব অলর্টান রূপটান।এখন শীত পড়লেই নুসরাত কোয়েলরা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে মাচা খোঁজে। এই চড়া কাঁপের ঘুড়িটা ভাল চিনেছে শিবপ্রসাদের মেলোড্রামার চু কিত কিত খেলা। এটা কদমতলায় চলে, সেলিমপুরেও চলে।আবার বারাসাতেও চলে। জিও সিমের মত ফিরিতে লেকচার। সৌমিত্র চাটুজ্জে এখন আলুর মত সবেতেই স্বাদ জোগাতে জরুরী পরিসেবা।ইনক্লুডিং শ্রীযন্ত্রম। কলপ লাগানো প্রসেনজিত এখন কাটাঘায়ের বার্নল। আর ঋতু? খেয়াল করে দেখবেন এখনও স্বপন সাহার যোগানো কস্টিউমএর মায়া ছাড়তে পারে নি তো অভিনয়। পাত্রপাত্রীর বিজ্ঞাপনেই বোঝা যায় আম বাঙালির আঁতের কথা,মানে কতটা জাতপাত মানে কতটা সাম্প্রদায়িক। তাদের মেইনস্ট্রিম সিনেমাও তাই সাদা কালো আর মোটা দাগের। আর পাঁচটা ভারতীয় প্রদেশের মত। এরা অক্ষম তাই হাসি।অথচ আমরা বিচলিত হইনি যখন বীতশোক নয় শ্রীজাত পুরষ্কারটা বাগিয়ে নেয়।এখন আবার তিনি বাংলা সিনেমার শহুরে ভার্সানের গীতিকার। পেজ থ্রীর আলোকপ্রাপ্ত ও বটে। শ্যামল "সাহাজাদা দারাশুকো" ধারাবাহিকভাবে লিখেছিলেন বর্ত্তমান সাপ্তাহিকে। সেটির মূল গ্রাহকেরা সেদিন চীরঞ্জিত দেখতেন এখন অঙ্কুশদের সিনেমাই বেশি দেখে।শৈবাল মিত্রের "গোরা" ধারাবাহিকভাবে বেরোতো মাতৃশক্তি পত্রিকায়। এঁদের বেশিরভাগ পাঠক সুভশ্রীকে চেনে, শুনেছে "আমি তোমার কোকাকোলা "বারবার। আমার মা গত চোদ্দবছর বিছানাবন্দী ফলত টিভি সিরিয়ালের গ্যাঁক গ্যাঁক আওয়াজগুলোই অনির্বচনীয় ঠেকে তাঁর ধুসর মস্তিষ্কে।তিনি সেই মহিলা যিনি ১টাকা ৫৫ তে 'একদিন প্রতিদিন 'দেখে এসে আমাকে পুরো গল্পটা বলেছিলেন। বাংলা সিনেমার মৃত্যু হয়েছে।এর চেয়ে গোবিন্দা আর করিশ্মার ছবিগুলো বেটার।হায়দ্রাবাদ টু ব্যাঙ্গালোর রুটে বাস যাত্রার একঘেয়েমি কাটানোর জন্যে কতবার পেয়েছি এই প্রয়োজনীয় প্যানাসিয়া। যতই হাসি দেবদের সিনেমা গুলো নিয়ে, এগুলো অন্তত কিছু টেকনিশিয়ানের পেটের ভাত দেয়। ওই পরমব্রত রাইমা জুটির মত নিছক হামবাগ আর সর্বাথে ডেঁপোমি নয়। এই ছবিগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজে অনিন্দ্যদের গান যা নিছক টিস করে কিন্তু মোহিনের ঘোড়ার মত ট্রাবল দেয় না। দেবার ক্ষমতাও নেই। একটা 'নির্জন সৈকতে'র মত কী 'গঙ্গা'র মত মেইন স্ট্রিম সিনেমা হয় না বলেই একটা "অযান্ত্রিক" দেখার মন মানসিকতা ও পরিসর তৈরী হয়না। মকবুল তো দুর, লাঞ্চবক্স কি গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর তৈরীর এলেম নেই আমাদের।
    তবে গদ্যটি মুগ্ধ করেছে।যশোধরার লেখার ধরন ও যেন বদলাচ্ছে। আজকের,'রবিবার'এর লেখাটাতেও সেটা মালুম হল।


    ReplyDelete