আত্মীয়তার
গন্ধের মধ্যে নাক ডুবিয়ে নিশ্বাস নিতে নিতে বুঝতে পারি বইয়ের মরশুম এসে গেছে। পুজো
এলেও এমন হয় না আজকাল। আগে হত। 'গন্ধবিধুর সমীরণে' গানটার মতোই। ভোরবেলা জানলা খুললে
সেই গন্ধ এসে জানিয়ে যেত, পুজো এসে গেছে। এখন পুজো বড় এঁদো, বড় ঘ্যানঘেনে, ফি বছর বৃষ্টিবাদলা।
কে যেন সেদিন লিখেছে দেখলুম, নতুন বইয়ের গন্ধ নাকি অস্বাস্থ্যকর। আজেবাজে কেমিক্যালের
বদগন্ধে ভর্তি। সে হোক। বছরের একটা-দুটো মাস এই অস্বাস্থ্যকর গন্ধের ভেতরে মুখ গুঁজে
আমরা একটু নিশ্বাস নেব। বাকি বছর স্বাস্থ্যসন্ধানী হয়ে নাকে পট্টি বেঁধে ঘুরে বেড়াব
নাহয়।
বইয়ের
গন্ধের মধ্যে অনেককিছু আছে আসলে। একটা গোটা ছোটবেলা আছে আমাদের। প্রত্যেকটা হাফ-ইয়ার্লি
আর অ্যানুয়ালের আগে বাবা লোভ দেখাত, স্ট্যান্ড করলেই বই কিনে দেবে। লোভে লোভে স্ট্যান্ড
করেও যেতাম। নতুন বই আসত। সেই বইয়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়তাম যতক্ষণ না শেষ হচ্ছে। আত্মীয়স্বজনের
বাড়ি, পাড়াপড়শির বাড়ি তখন যাতায়াত ছিল মানুষের। যেখানেই বগলদাবা করে নিয়ে যাওয়া হত
আমায়, বই মুখে করে বসে পড়তাম। কথায়বার্তায় একেবারে ন্যালাক্যাবলা ছিলাম বলে স্কুল আর
খেলার সময়টুকু ছাড়া বন্ধু ছিল না। বেস্ট ফ্রেন্ড একজনই ছিল। বই।
সে
একটা সময় ছিল, যা পেতাম তাই পড়তাম। পড়তাম মানে একেবারে ডুবে যেতাম। হুঁশ-টুঁশ থাকত
না। কোনও কথা কানে যেত না। আর এখন তো এই ই-দুনিয়া বইয়ের স্বর্গরাজ্য। কোন বইয়ের পিডিএফ
না পাওয়া যায় এখানে। এত এত ওয়েবজিন হচ্ছে। আর কিন্ডল তো আছেই, তার হাজারও ফিচার নিয়ে।
ইচ্ছে থাকলে, বই পড়ার উপায় এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। তবু, সব থেকেও, কী একটা নেই। সেই
গন্ধটা। যার হাত ধরে বইয়ের সঙ্গে প্রথম সম্পর্ক তৈরি হয়। খানিকটা নতুন বিয়ের গন্ধের
মতোই। দিনযাপনের অভ্যেসে, যা ফিকে হয়ে যায় ক্রমশ। অনেক বছর পর, তাক থেকে নামিয়ে ধুলোটুলো
ঝেড়ে হাতে নিলে দেখা যায়, সে গন্ধ আর নেই। আলমারির এককোণে পড়ে থাকা বেনারসির মতোই,
কেমন এক অনাদর আর অব্যবহারের গন্ধ তার গায়।
এখন
এই ই-দুনিয়ায় মাতব্বরি করছি যারা, আমাদের তো আর ক্ষমতা নেই যে নতুন বইয়ের গন্ধ পাতায়
পাতায় মাখিয়ে দেব। আমরা কপি-পেস্ট করে শক্ত কাজকে জলের মতো করে ফেলতে পারি বড়জোর। গ্যালারি
থেকে সবুজ তুলে তুলে ক্লোরোfeel-এর পাতা ভরিয়ে দিতে পারি। কিন্তু নতুন পাতার গন্ধের
মধ্যে জেগে উঠতে পারি কি? সত্যিই আমরা সালোকসংশ্লেষ পারব কি কোনওদিন?
সময়ই
বলতে পারবে, হয়তো।
তরতাজা প্রাণের গন্ধ পেলাম। ভালো থেকো তোমরা।
ReplyDeleteতরতাজা প্রাণের গন্ধ পেলাম। ভালো থেকো তোমরা।
ReplyDeleteসত্যিই তাই। আমরা কপি-পেস্ট করে শক্ত কাজকে জলের মতো করে ফেলতে পারি বড়জোর
ReplyDeleteবাহ, বেশ লাগল
ReplyDeleteকবিয়াল কি এই সালোকসংশ্লেষ তোমার সঙ্গে শ্বাস নিচ্ছে বহুত্ববাদী এই সমাজের সেইসব লোকজন যারা এখনো লোভে লোভে স্ট্যান্ড করার নিরন্তর প্রয়াস করে চলেছে। এখানে পিছিয়ে পড়েও আনন্দ! আমাদের যাত্রা আছে। গন্তব্যের দরকার নেই।
ReplyDelete