এই ছবিটি বারবারা হপওয়ার্ডের। ১৬ শতকের বিখ্যাত জার্মান চিত্রকর ও খোদাইকার ডুরারের আঁকা তাঁর মায়ের প্রতিকৃতি, কাঠকয়লা দিয়ে আঁকা ঘোমটা সহ সেমিজ পরে মা— যিনি তাঁর বিস্ফারিত দৃষ্টিতে যেন দেখছেন অপারলোক। কিন্তু নির্ভয়, আর মর্ত্য আর অমর্ত্যলোকের মধ্যবর্তী গমনপথে দাঁড়িয়ে মা বারবারা।
ডুরার বহু প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন তাঁর মায়ের। যখন বৃদ্ধা বারবারা দীর্ঘ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুপথযাত্রী, এই সময়ে ডুরার দেখে চলেছিলেন তাঁর জননীকে আর রেখাচিত্রে ধরে রাখছিলেন কীভাবে তাঁর অশীতিপর জননী বুঝতে পারছেন এক নিঃশব্দ ও প্রশান্ত যন্ত্রণায় চলে যেতেই হবে তাঁকে মর্ত্যলোক ছেড়ে— বেজে উঠবে শুধু চার্চের সুরেলা টুংটাং বাজনা। ডুরারের এই ছবিটি হয়ে উঠেছিল হাড়গিলে কন্ঠা, সেমিজের আড়ালে থাকা চুপসে যাওয়া বুক ও বিস্ফারিত দৃষ্টি নিয়ে যন্ত্রণার আড়ালে লুকিয়ে থাকা নির্বাণ ও প্রশান্তির অভিলাষ।
অ্যালব্রেখট ডুরার জন্মেছিলেন এক দরিদ্র স্বর্ণকার পরিবারে। তীব্র মাতৃভক্ত অ্যালব্রেখট পিতামহের কাছে শিখেছিলেন কীভাবে কাঞ্চনপাতকে নিখুঁতভাবে খোদাই করে গহনা করে তোলা যায়। এই সুচারু কিরিকিরি খোদাই রেখাকে কীভাবে মূল্যবান করে তোলা যায়, তার কারিগরি ডুরারকে শিখিয়েছিলেন তাঁর পিতামহ হিরোনিমাস হপওয়ার্ড। স্যাকরা দাদু শিখিয়েছিলেন গহনা তৈরির আলঙ্কারিক চাতুরি, এই চাতুরিকে আত্মস্থ করেও ডুরার সেই পথে পা বাড়াননি, বরং কাঞ্চনপাতকে কীভাবে তার স্বর্ণালী চকচকানিকে হত্যা করে গহনা প্রস্তুত করা যায় তার প্রচেষ্টা করেছিলেন ডুরার। চেয়েছিলেন কীভাবে মানবিকভাবে অমার্জিত করে তোলা যায় রেখাকে যা উঠে আসবে কাঞ্চনপাতের খোদাইয়ের প্ররোচনায়।
ডুরারের কাছে ড্রইং, ড্রাইপয়েন্ট, কাঠখোদাই মাধ্যমই সহায়ক হয়ে উঠেছিল যন্ত্রণাময় শরীরকে মূর্ত করার— যা সদর্থে হয়ে উঠবে এক শরীররূপ গহনা, জৈব, ক্ষয়, প্যাথোলজিক্যাল-যন্ত্রণাময়; অথচ সব মিলিয়ে এক ভিন্ন আলঙ্কারিক গুণ। এইজন্যই অ্যালব্রেখট আজও প্রাসঙ্গিক, প্রায় পাঁচশো বছর অতিক্রম করেও। ডুরার তাঁর ডায়েরিতে বলছেন, "আমার জননী, নিরন্তর অসহ্য প্রসব বেদনায় জন্ম দিয়েছেন অষ্টাদশ সন্তান, যার মধ্যে তেরোটির মৃত্যু ঘটেছে প্রসবান্তে, মা তার জীবনের বেশিরভাগ সময়ই গর্ভবতী থেকেছেন।" ডায়েরিতে ডুরার আরও লিখছেন, "আমার মা সতত গর্ভবতী ছিলেন তাঁর জীবনের বহু সময় ধরে, কিন্তু সদানন্দ থেকেছেন, তাই মায়ের এই যন্ত্রণাময় যাত্রা আমি সহ্য করতে পারছি না।" ডুরার কাঁদছেন বটে, কিন্তু মা-পুত্রের এই নিবিড় সম্পর্ক চারিয়ে যাচ্ছে তাঁর রেখাচিত্রের আখ্যানে। ডুরার নিজে ছিলেন না যখন বারবারা চলে যাচ্ছেন। ছিলেন তাঁর বাড়ির এক পরিচারক। ডুরার লিখছেন, "মা তার স্ব-ইচ্ছায় নির্বাসনে চলে গেলেন।" ডুরার ডুকরে কাঁদলেও মুষ্ঠিতে ধরে রেখেছেন চারকোল পেন্সিল। বারবারা চলে যাচ্ছেন এক সুগম আলোর পথ ধরে, সমস্ত সাংসারিক দায়িত্বের বন্ধন ছিন্ন করে। ডুরারের পণ্ডিত বন্ধু ফিলিপ অ্যারি বলেছেন মৃত্যু এক আনুষ্ঠানিক ক্রিয়া— কেঁদোনা ডুরার। তিনি ফিলিপকে স্মরণ করছেন। তবুও কাঁদছেন। আবার ডায়েরিতে লিখছেন, "যাক মায়ের অগ্নিপরীক্ষা শেষ— যন্ত্রণাই সত্য, এ এক সেতু যা বিলাপময়, এ সেতু অন্যপাড়ে যাবার সুগম পথ।" মার্টিন লুথারও বলছেন, "আর কেঁদোনা ডুরার, এ সেতু সত্য ও সুগম।" তবুও ডুরার ডুকরে কাঁদেন। বারবারা চলে যাচ্ছেন, তাঁর অক্ষিগোলককে দেখছেন ডুরার। চারকোল পেন্সিল দিয়ে বুঝতে চাইছেন।
বারবারা দেখেছেন প্লেগ সহ ভিন্ন রোগ যাতনা সহ সীমাহীন দারিদ্রের চাপা কান্না। সহ্য করেছেন সামাজিক ব্যঙ্গ, কটুক্তি— এমনকী কিঞ্চিত অত্যাচার। তথাপি তিনি বিদ্বেষহীন, শান্ত, অভিযোগহীন মাতৃকা। অথচ, তিনি ছিলেন অসম্ভব মৃত্যুভয়ে কম্পিত নারী, মৃত্যুর পূর্ব লগ্নে তিনি বলেছিলেন, "ইহলোক ছেড়ে যেতে ভয় নেই, যদি স্বয়ং পরমেশ্বর সামনে থাকেন উত্তরণের লগ্নে।" ডুরার তাঁর ডায়েরিতে আরও বলছেন, "কী আশ্চর্য, অন্তিম লগ্নে যখন দেখি জননী প্রায় মৃত্যুঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে প্রলাপ বকছেন ভয়ঙ্কর মৃত্যুভয়ে, জানিনা কেন, চাইছেন পবিত্র গঙ্গাজল তার মুখে কয়েক ফোঁটা মাত্র। এরপর দেখি উনি নির্বাক হয়ে গেলেন, ধীরে ধীরে তার দুচোখ শান্ত হয়ে গেল, দেখলাম কীভাবে তার হৃদয়ে আঁচড় কেটে তার বুকে থাবা বসাচ্ছে মৃত্যু, যেভাবে নৌকাতে নাবিক হাল টানে বৈতরণী পার করতে— কালো জল অতিক্রম করে। দেখলাম তার দুচোখ, কীভাবে হাঁপ টেনে বাঁচতে চাইছে, চাইছে তার নুরেমবার্গ শহরের বাড়িতে চলে যেতে। তার ঠোঁট যন্ত্রণাকে পাশ কাটিয়ে এক প্রশান্ত সমাহিত অবস্থায় চলে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমি কী করতে পারি প্রার্থনা করা ছাড়া?" এই অবস্থাকে প্রকাশ করা অসম্ভব— বলছেন ডুরার। "ঈশ্বরকে বলি, আমার জননীকে ক্ষমা করো...আর কিস্যু চাওয়ার নেই। হে ঈশ্বর মুক্তি দাও তাকে। জননীকে যেতেই হবে, যে জননী রেখে গেছেন অজস্র কৃতী সন্তানসন্ততি যার মধ্যে একজন স্বয়ং ক্ষমতাবান শিল্পী ডুরার।" ডুরার তাঁর জননীকে দেখছেন, বারবারা আছেন কী নিদারুণ এক কক্ষে— যিনি হয়তো চলে যাবেন ইহলোক ছেড়ে। সারা কক্ষে আমোদিত এক অপারলোকে চলে যাবার সুবাস। "এই সীমাহীন যন্ত্রণা ও সুবাস বড় সুতীব্র হে পরমেশ্বর", বলছেন ডুরার। বারবারা, এক সবুজ চাদরে ঢাকা বিছানায় শুয়ে আছেন— ভীষণ জোরে বাতাস নিতে চাইছেন বুকে, ডুরার সব দেখেছেন কিন্তু কিছু করবার নেই তাঁর, শুধু তাম্রপাত তক্ষণ বা কাঠখোদাইয়ে সব যন্ত্রণাকে মূর্ত করে তোলা ছাড়া। শিল্পীরা বড় অসহায় জাগতিক যন্ত্রণাকে সহ্য করার ক্ষেত্রে। বারবারা, হাঁফ টানছেন, সবুজ চাদরে ঢাকা তাঁর শরীর। ডুরার শুধু দেখে চলেন— চলে যাচ্ছেন মা, বেজে উঠছে তাঁর নুরেমবার্গ শহরের মন্দিরে সুরেলা ঘন্টাধ্বনি। আকাশে উড়ছেন মাতা মেরির মা অ্যানি। আকাশে মধু বৃষ্টি হচ্ছে অশ্রুধারার মতন।
মা বারবারা চলে যাচ্ছেন বহুদূরে আর সেই যাত্রা দেখে চলেছেন চিত্রকর ডুরার। চোখের জল টসটস করে গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে। হে মাতা চলে যেওনা এভাবে। তবুও এই অসহনীয় যন্ত্রণার অভিঘাতে চিত্রকর ডুরার স্থিতধী হয়ে ভাবছেন কীভাবে এই যন্ত্রণাকে তাম্রপাত তক্ষণে ধরে রাখা যায়। "ককিয়ে কেঁদে লাভ নেই ডুরার", আকাশে ধ্বনিত হল পরমেশ্বরের বাণী। অবশেষে ওই সবুজ চাদরে ঢাকা মা সমাহিত হলেন। চিকিৎসকের আদেশে নার্স সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলেন বারবারার মুখ। সরকারি নিয়মে মা বারবারাকে নিয়ে যাওয়া হল ঠান্ডা কক্ষে যেখানে শুয়ে আছেন অনেক মৃতদেহরা। ডুরার বারবারাকে দেখলেন প্লাস্টিকে বাঁধা এক আবৃত শরীর— কী শান্ত হয়ে শুয়ে আছেন মা, ডুরার আবার ডুকরে কেঁদে উঠলেন— মা, মাগো!
ডুরার বহু প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন তাঁর মায়ের। যখন বৃদ্ধা বারবারা দীর্ঘ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুপথযাত্রী, এই সময়ে ডুরার দেখে চলেছিলেন তাঁর জননীকে আর রেখাচিত্রে ধরে রাখছিলেন কীভাবে তাঁর অশীতিপর জননী বুঝতে পারছেন এক নিঃশব্দ ও প্রশান্ত যন্ত্রণায় চলে যেতেই হবে তাঁকে মর্ত্যলোক ছেড়ে— বেজে উঠবে শুধু চার্চের সুরেলা টুংটাং বাজনা। ডুরারের এই ছবিটি হয়ে উঠেছিল হাড়গিলে কন্ঠা, সেমিজের আড়ালে থাকা চুপসে যাওয়া বুক ও বিস্ফারিত দৃষ্টি নিয়ে যন্ত্রণার আড়ালে লুকিয়ে থাকা নির্বাণ ও প্রশান্তির অভিলাষ।
অ্যালব্রেখট ডুরার জন্মেছিলেন এক দরিদ্র স্বর্ণকার পরিবারে। তীব্র মাতৃভক্ত অ্যালব্রেখট পিতামহের কাছে শিখেছিলেন কীভাবে কাঞ্চনপাতকে নিখুঁতভাবে খোদাই করে গহনা করে তোলা যায়। এই সুচারু কিরিকিরি খোদাই রেখাকে কীভাবে মূল্যবান করে তোলা যায়, তার কারিগরি ডুরারকে শিখিয়েছিলেন তাঁর পিতামহ হিরোনিমাস হপওয়ার্ড। স্যাকরা দাদু শিখিয়েছিলেন গহনা তৈরির আলঙ্কারিক চাতুরি, এই চাতুরিকে আত্মস্থ করেও ডুরার সেই পথে পা বাড়াননি, বরং কাঞ্চনপাতকে কীভাবে তার স্বর্ণালী চকচকানিকে হত্যা করে গহনা প্রস্তুত করা যায় তার প্রচেষ্টা করেছিলেন ডুরার। চেয়েছিলেন কীভাবে মানবিকভাবে অমার্জিত করে তোলা যায় রেখাকে যা উঠে আসবে কাঞ্চনপাতের খোদাইয়ের প্ররোচনায়।
ডুরারের কাছে ড্রইং, ড্রাইপয়েন্ট, কাঠখোদাই মাধ্যমই সহায়ক হয়ে উঠেছিল যন্ত্রণাময় শরীরকে মূর্ত করার— যা সদর্থে হয়ে উঠবে এক শরীররূপ গহনা, জৈব, ক্ষয়, প্যাথোলজিক্যাল-যন্ত্রণাময়; অথচ সব মিলিয়ে এক ভিন্ন আলঙ্কারিক গুণ। এইজন্যই অ্যালব্রেখট আজও প্রাসঙ্গিক, প্রায় পাঁচশো বছর অতিক্রম করেও। ডুরার তাঁর ডায়েরিতে বলছেন, "আমার জননী, নিরন্তর অসহ্য প্রসব বেদনায় জন্ম দিয়েছেন অষ্টাদশ সন্তান, যার মধ্যে তেরোটির মৃত্যু ঘটেছে প্রসবান্তে, মা তার জীবনের বেশিরভাগ সময়ই গর্ভবতী থেকেছেন।" ডায়েরিতে ডুরার আরও লিখছেন, "আমার মা সতত গর্ভবতী ছিলেন তাঁর জীবনের বহু সময় ধরে, কিন্তু সদানন্দ থেকেছেন, তাই মায়ের এই যন্ত্রণাময় যাত্রা আমি সহ্য করতে পারছি না।" ডুরার কাঁদছেন বটে, কিন্তু মা-পুত্রের এই নিবিড় সম্পর্ক চারিয়ে যাচ্ছে তাঁর রেখাচিত্রের আখ্যানে। ডুরার নিজে ছিলেন না যখন বারবারা চলে যাচ্ছেন। ছিলেন তাঁর বাড়ির এক পরিচারক। ডুরার লিখছেন, "মা তার স্ব-ইচ্ছায় নির্বাসনে চলে গেলেন।" ডুরার ডুকরে কাঁদলেও মুষ্ঠিতে ধরে রেখেছেন চারকোল পেন্সিল। বারবারা চলে যাচ্ছেন এক সুগম আলোর পথ ধরে, সমস্ত সাংসারিক দায়িত্বের বন্ধন ছিন্ন করে। ডুরারের পণ্ডিত বন্ধু ফিলিপ অ্যারি বলেছেন মৃত্যু এক আনুষ্ঠানিক ক্রিয়া— কেঁদোনা ডুরার। তিনি ফিলিপকে স্মরণ করছেন। তবুও কাঁদছেন। আবার ডায়েরিতে লিখছেন, "যাক মায়ের অগ্নিপরীক্ষা শেষ— যন্ত্রণাই সত্য, এ এক সেতু যা বিলাপময়, এ সেতু অন্যপাড়ে যাবার সুগম পথ।" মার্টিন লুথারও বলছেন, "আর কেঁদোনা ডুরার, এ সেতু সত্য ও সুগম।" তবুও ডুরার ডুকরে কাঁদেন। বারবারা চলে যাচ্ছেন, তাঁর অক্ষিগোলককে দেখছেন ডুরার। চারকোল পেন্সিল দিয়ে বুঝতে চাইছেন।
বারবারা দেখেছেন প্লেগ সহ ভিন্ন রোগ যাতনা সহ সীমাহীন দারিদ্রের চাপা কান্না। সহ্য করেছেন সামাজিক ব্যঙ্গ, কটুক্তি— এমনকী কিঞ্চিত অত্যাচার। তথাপি তিনি বিদ্বেষহীন, শান্ত, অভিযোগহীন মাতৃকা। অথচ, তিনি ছিলেন অসম্ভব মৃত্যুভয়ে কম্পিত নারী, মৃত্যুর পূর্ব লগ্নে তিনি বলেছিলেন, "ইহলোক ছেড়ে যেতে ভয় নেই, যদি স্বয়ং পরমেশ্বর সামনে থাকেন উত্তরণের লগ্নে।" ডুরার তাঁর ডায়েরিতে আরও বলছেন, "কী আশ্চর্য, অন্তিম লগ্নে যখন দেখি জননী প্রায় মৃত্যুঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে প্রলাপ বকছেন ভয়ঙ্কর মৃত্যুভয়ে, জানিনা কেন, চাইছেন পবিত্র গঙ্গাজল তার মুখে কয়েক ফোঁটা মাত্র। এরপর দেখি উনি নির্বাক হয়ে গেলেন, ধীরে ধীরে তার দুচোখ শান্ত হয়ে গেল, দেখলাম কীভাবে তার হৃদয়ে আঁচড় কেটে তার বুকে থাবা বসাচ্ছে মৃত্যু, যেভাবে নৌকাতে নাবিক হাল টানে বৈতরণী পার করতে— কালো জল অতিক্রম করে। দেখলাম তার দুচোখ, কীভাবে হাঁপ টেনে বাঁচতে চাইছে, চাইছে তার নুরেমবার্গ শহরের বাড়িতে চলে যেতে। তার ঠোঁট যন্ত্রণাকে পাশ কাটিয়ে এক প্রশান্ত সমাহিত অবস্থায় চলে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমি কী করতে পারি প্রার্থনা করা ছাড়া?" এই অবস্থাকে প্রকাশ করা অসম্ভব— বলছেন ডুরার। "ঈশ্বরকে বলি, আমার জননীকে ক্ষমা করো...আর কিস্যু চাওয়ার নেই। হে ঈশ্বর মুক্তি দাও তাকে। জননীকে যেতেই হবে, যে জননী রেখে গেছেন অজস্র কৃতী সন্তানসন্ততি যার মধ্যে একজন স্বয়ং ক্ষমতাবান শিল্পী ডুরার।" ডুরার তাঁর জননীকে দেখছেন, বারবারা আছেন কী নিদারুণ এক কক্ষে— যিনি হয়তো চলে যাবেন ইহলোক ছেড়ে। সারা কক্ষে আমোদিত এক অপারলোকে চলে যাবার সুবাস। "এই সীমাহীন যন্ত্রণা ও সুবাস বড় সুতীব্র হে পরমেশ্বর", বলছেন ডুরার। বারবারা, এক সবুজ চাদরে ঢাকা বিছানায় শুয়ে আছেন— ভীষণ জোরে বাতাস নিতে চাইছেন বুকে, ডুরার সব দেখেছেন কিন্তু কিছু করবার নেই তাঁর, শুধু তাম্রপাত তক্ষণ বা কাঠখোদাইয়ে সব যন্ত্রণাকে মূর্ত করে তোলা ছাড়া। শিল্পীরা বড় অসহায় জাগতিক যন্ত্রণাকে সহ্য করার ক্ষেত্রে। বারবারা, হাঁফ টানছেন, সবুজ চাদরে ঢাকা তাঁর শরীর। ডুরার শুধু দেখে চলেন— চলে যাচ্ছেন মা, বেজে উঠছে তাঁর নুরেমবার্গ শহরের মন্দিরে সুরেলা ঘন্টাধ্বনি। আকাশে উড়ছেন মাতা মেরির মা অ্যানি। আকাশে মধু বৃষ্টি হচ্ছে অশ্রুধারার মতন।
মা বারবারা চলে যাচ্ছেন বহুদূরে আর সেই যাত্রা দেখে চলেছেন চিত্রকর ডুরার। চোখের জল টসটস করে গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে। হে মাতা চলে যেওনা এভাবে। তবুও এই অসহনীয় যন্ত্রণার অভিঘাতে চিত্রকর ডুরার স্থিতধী হয়ে ভাবছেন কীভাবে এই যন্ত্রণাকে তাম্রপাত তক্ষণে ধরে রাখা যায়। "ককিয়ে কেঁদে লাভ নেই ডুরার", আকাশে ধ্বনিত হল পরমেশ্বরের বাণী। অবশেষে ওই সবুজ চাদরে ঢাকা মা সমাহিত হলেন। চিকিৎসকের আদেশে নার্স সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলেন বারবারার মুখ। সরকারি নিয়মে মা বারবারাকে নিয়ে যাওয়া হল ঠান্ডা কক্ষে যেখানে শুয়ে আছেন অনেক মৃতদেহরা। ডুরার বারবারাকে দেখলেন প্লাস্টিকে বাঁধা এক আবৃত শরীর— কী শান্ত হয়ে শুয়ে আছেন মা, ডুরার আবার ডুকরে কেঁদে উঠলেন— মা, মাগো!
খুব ভালো লাগলো......
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো......
ReplyDeleteEto sundar Bangla Bhashay Dokhol tomar, Amitava! Apurbo hoyechhe lekha!! Anubhob korchhi Mrityu'r Prosonnota, ar Astitwer anostitwo ba Anastitwer astitwo. Je arr nei take tnar gota jiboner khnutinati, chhoto abvyas, bhalolaga, bhabna niye protidin bnachi amra. tai astitwo. amar benche thakar sange se benche theke jaay astitwomoy hoye. Khub bhalo laglo.
ReplyDelete