ক্লোরোfeel-এর পাতা

Saturday, 7 January 2017

গোড়ার কথা : মিতুল দত্ত

হাত-পা অসাড় হয়ে যাওয়া শীত আমাদের এই দিনকালে আর পড়ে না। হ্যাঁ, গরম পড়ে, সেটাও কেমন যেন জ্বালিয়েপুড়িয়ে। একটা বিচ্ছিরি ঘ্যানঘেনে বর্ষাকাল আসে এখন পৃথিবীতে, আর মনে পড়ে যায় সেই মাথায় গোঁত্তা খেতে খেতে শিল কুড়োনোর দিন। দাওয়া থেকে রোয়াক আর রোয়াক থেকে দাওয়া, ছপ্ ছপা ছপ্ কুমিরডাঙা খেলতে খেলতে, সন্ধে সাতটার মধ্যে বিছানায় নেতিয়ে পড়ার দিন।

আজকের এই শীতের সন্ধেবেলায়, ঘটিগরমের ঠোঙার একেবারে তলানি থেকে যা উঠে এল, তার দিকে ভালো করে তাকাতে না তাকাতেই, প্যাঁচার মতো মুখ করে সে আমাকে বলে, কী গো, ভুলে গেলে? অমনি আমার মনে পড়ে যায়, মাঠজোড়া ম্যারাপ বাঁধা, উঁচু স্টেজ, পর্দা নামানো, তার সামনে বাঁদিকে ব্যাটাছেলে আর ডানদিকে মহিলাদের জন্য পাতা হয়েছে চট। কার হাত ধরে হাঁটছি যেন, হাঁটছি না তো, লাফাচ্ছি, কত সামনে গিয়ে বসতে পারি। তারপর এক সময়, দুপাশ দিয়ে টেনে টেনে সরিয়ে দেওয়া হয় পর্দা, ঝং ঝং করে বাজনা বেজে ওঠে। শুরু হয়ে যায়, পুতুলনাচের ইতিকথা। একটু আগেও স্টেজের ধারে দাঁড়িয়ে বিড়ি ফুঁকছিল যে, গলা সরু করে সীতার রোলে সে কী কাঁদান কাঁদে! বছরের পর বছর, এইভাবেই তাদের সুতোর টানে, বেহুলা লখিন্দর, সাবিত্রী সত্যবান, সীতার বনবাস দেখে হাসতে-হাসতে কাঁদতে-কাঁদতে ঘরে ফিরেছে গ্রামবাংলার আপামর মানুষজন। ক্লোরোfeel-এর জন্য হাতে লিখে পাঠানো অতনুদার লেখাটা কম্পোজ করতে করতে খুলে গেল যেন, ছোট্টবেলার সেই পুতুলনাচের পর্দা। একটা শৈশব। হ্যাঁ, যে শৈশবে গাছের পাতারা সত্যি সত্যি সবুজ ছিল।

ভেবেছিলাম, সম্পাদকীয় লিখব না। থাক না, কী-ই বা লিখব, এককথাতেই তো বলে দিয়েছিলাম, যা আমি বলতে চাই। ক্লোরোfeel কী, ক্লোরোfeel কেন, খায় না মাথায় দেয়, এসব বোঝানো কি সত্যিই খুব জরুরি? কিন্তু যা হয়, কথা বলতে গেলে কথায় পেয়ে বসে। ভাবি, সবাইকে আর একবার অন্তত বুঝিয়ে দিই যে আমরা আসলে একটা রক্ত-সঞ্চালনের কথা বলতে এসেছি। কে কোথায় কীভাবে নিশ্বাস নিচ্ছেন, বাঁচিয়ে রাখছেন তার ভেতরে চারিয়ে যাওয়া অতিসূক্ষ্ম আর সেন্সিটিভ ডালপালাকে, তা সাহিত্যেরই হোক বা যেকোনও শিল্পমাধ্যমের, তাদের কথাই বলতে এসেছি আমরা। গোটা একটা জীবন খুঁটে খুঁটে, যে নির্যাসটুকুকে বাঁচিয়ে রাখার সাধনা করে যাচ্ছেন তারা, সেই নির্যাসই ছড়িযে পড়ুক আজ থেকে, ক্লোরোfeel-এর পাতায়।

6 comments:

  1. মিতুল, সবুজ পাতায় বৃষ্টির ঘ্রাণ পাচ্ছি। আমাকেও সঙ্গে নিও। তোমাকে অভিননন্দন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. নিশ্চই। লেখা দিও। কথা হবে।

      Delete
  2. Aro Sobuj chai Mituldi. Aro notunder ano.Taaza batas boichhe

    ReplyDelete
    Replies
    1. খুব খুব চেষ্টা করব। তোমার লেখা চাই কিন্তু।

      Delete
  3. নতুন প্রাণ সজীবতায় ভরপুর। ঠিক তোমার মতো। আরো একটু বিষমুক্ত নিঃশ্বাস। আরো একবার বেঁচে ওঠা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. বেঁচে থাকো। বেঁচে থাকা জরুরি। ভালোবাসা।

      Delete